বাংলাদেশের নাগরিকরা আয়কর দেওয়া এবং বিভিন্ন কারণে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন) বা টিন সনদ নিবন্ধন করে থাকেন। ন্যূনতম করযোগ্য আয়সীমার নিচে থাকলে বা টিন সনদের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেলে কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে টিন নম্বর বাতিল করা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল করবেন কিভাবে।
টিন নম্বর থাকলেই দিতে হবে দুই হাজার টাকা আয়করটিন নম্বর থাকলেই দিতে হবে দুই হাজার টাকা আয়কর
টিন সার্টিফিকেট বাতিলের পূর্বশর্ত বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি টিন নিবন্ধন বাতিলের আবেদনের জন্য ছয়টি শর্ত নির্ধারণ করেছে। সেগুলো হলো-
১. যে করদাতাদের কর রিটার্ন দাখিলের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
২. মৃত্যু, অবসায়ন, অবলুপ্তি বা অনুরূপ কোনো কারণে করদাতা অস্তিত্বহীন হয়ে গেলে।
৩. করদাতা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশ ত্যাগ করলে এবং বাংলাদেশে তার আয় করার মতো কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না থাকলে।
৪. ডুপ্লিকেট বা একাধিক নিবন্ধন অথবা ভুল তথ্য সম্বলিত নিবন্ধন পেলে।
৫. কোনো কারণে আইনি মর্যাদা পরিবর্তন হলে।
৬. অন্য কোনো আইনানুগ কারণে টিন নিবন্ধন বাতিলের প্রয়োজন হলে।
◆কারা টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে পারবেন: করদাতার আয় আয়কর আরোপযোগ্য সীমার নিচে থাকলে টিন বাতিলের আবেদন করতে পারেন। ২০২৩-২৪ অর্থ-বছরে ন্যূনতম আয়করযোগ্য আয় হচ্ছে-
সাধারণ করদাতার জন্য বছরে করযোগ্য আয় তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে। মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় চার লাখ টাকার ঊর্ধ্বে।
◆ প্রতিবন্ধী করদাতা এবং তৃতীয় লিঙ্গ করদাতার ক্ষেত্রে বছরে করযোগ্য আয় চার লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকার ঊর্ধ্বে। গেজেট-ভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার বেলায় বছরে করযোগ্য আয় পাঁচ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে।
অনেক সময়ই কারও এই পরিমাণের কম বাৎসরিক আয় থাকা সত্ত্বেও অন্য কোনো প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তৈরি করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে সার্টিফিকেটটির প্রয়োজন না হলে সেটি বাতিলের আবেদন করতে পারেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
◆ আবেদনকারীর বর্তমান টিন সার্টিফিকেটের একটি প্রিন্ট কপি
◆ জাতীয় পরিচয়পত্র ও তার একটি ফটোকপি
◆ পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ-বছরের শূন্য কর রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্রের ফটোকপি।
◆ টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদন পদ্ধতি: টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল: যেহেতু পর পর কমপক্ষে তিন অর্থ বছরের শূন্য রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেখাতে হবে, তাই আপনাকে আগামী তিন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে। অতঃপর টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করে যাবেন। প্রতি কর রিটার্ন দাখিলের পর একটি কর রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেওয়া হবে। এগুলো পরবর্তীতে সংযুক্তির জন্য সংরক্ষণ করে রাখবেন।
◆উপ-কর কমিশনার বরাবর একটি আবেদনপত্র লিখবেন। এখানে টিন সনদ বাতিলের জন্য যাবতীয় কারণ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করবেন। লেখা শেষ হলে বিগত তিন বছরের রিটার্ন প্রাপ্তি স্বীকার পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজগুলো সংযুক্ত করে আবেদনপত্র জমা দিয়ে দিবেন।
◆ এখানে উল্লেখ্য যে, আয়কর অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য টিন সনদের মালিকের যাওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তিনি যেতে অপারগ হলে, তার পরিবর্তে তার প্রতিনিধি হিসেবে যে কেউই আয়কর অফিসে উপস্থিত হয়ে দরখাস্ত জমা দিতে পারবেন।
◆টিন সার্টিফিকেট বাতিলের আবেদনের সমুদয় পদ্ধতিতে সরকার ঘোষিত কোনো রকম খরচ নেই। অর্থাৎ করদাতাগণ বিনামূল্যেই তাদের টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করতে পারবেন।